1. news@sangbadeisomoy.com : সংবাদ এই সময় : সংবাদ এই সময়
  2. info@www.sangbadeisomoy.com : সংবাদ এইসময় :
দায় ও শিল্পের ভূমিকা সংবাদমাধ্যমের - সংবাদ এইসময়
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ অপরাহ্ন

দায় ও শিল্পের ভূমিকা সংবাদমাধ্যমের

  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

মতামত ডেস্ক।

ছোটবেলা থেকে আমার আঁকাআঁকির একটা অভ্যাস ছিল। ৬০-৬৫ বছর আগে কিশোরগঞ্জের মত একটা মহকুমায় শৈশব কেটেছে, তখন থেকে ছবি আঁকি। শিল্পী হব, এমন কোনো ভাবনা তখন মাথায় ছিল না। আর্ট যে গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু—এ রকম কোনো ধারণা তখন ওখানে অনেকের ছিল না, আমারও ছিল না। আঁকাআঁকি ছাড়াও হাতের ঝালর বানাতে ভালো লাগত। লতাপাতা দিয়ে হাতের ঘড়ি, পাখি ইত্যাদি বানাতাম। ওই বয়সে সবাই যেমনটা করে থাকে। এভাবেই শিল্পের সূত্রপাত বলা যায়।অনলাইন আর্ট কোর্স

একসময় বড় হলাম। গ্রাম থেকে চলে এলাম ঢাকা শহরে। ঢাকায় আর্ট কলেজে ভর্তি হলাম। তখন যে বার্ষিক প্রদর্শনী হত, সেই সব প্রদর্শনীর ছোটখাটো খবর বেরোত পত্রপত্রিকায়। আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রচুর ছবি আঁকতে শুরু করলাম। জলরংসহ নানা মাধ্যমে কাজ করছিলাম তখন। এত ছবি এঁকেছিলাম যে তখন একক প্রদর্শনী করার দরকার হয়েছিল। প্রায় চল্লিশটা ছবি নিয়ে একটা প্রদর্শনী হয়েছিল। বাসেত সাহেব খুব ভালো শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যারা ছবি আঁকবে, তাদের ক্ষেত্রে পারসেন্টেজ যুক্ত হবে। আমি মোটামুটি ভালো নাম্বার পেয়েছিলাম। এরপর আমি ’৬৯ সালে স্কলারশিপ পেয়ে স্পেনে চলে যাই।

সংবাদমাধ্যমে চিত্রকলার প্রচার বা আলোচনা; যা-ই বলি না কেন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় এটা এক সাধারণ ব্যাপার। শিল্পীদের যেসব প্রদর্শনী হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন বা আলোচনা প্রকাশিত হয়ে সেখানে। আমি ওখানকার যেসব শিল্পমেলা হত, সেগুলোতে অংশ নিয়েছি, সেসবের খবর প্রকাশিত হয়েছে ওখানকার পত্রপত্রিকায়। সেখানে আমি প্রচুর এচিং করেছি। গত চল্লিশ বছর এচিং করেছি নানা বিষয়ে। এচিংয়ের মাধ্যমে আমার একটা এক্সপোজ হয়েছে, এচিংয়ের প্রদর্শনীও হয়েছে। আমার এচিংয়ের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেখলে মনে হতো জলরঙের মত। কারণ, এচিং তো কাটখোট্টা একটা মাধ্যম। ফলে জলরঙের মত হওয়াটা একটা ভিন্ন রকম এফেক্ট। ওই সময় El Pais-সহ আরও বড় বড় সংবাদমাধ্যম আমার চিত্রকলা প্রদর্শনী সম্পর্কে লিখেছে। ফ্রান্সিস্কো গয়ার যে জন্মস্থান, ফুয়েন্দেতোদোস; সেখানেও আমার প্রদর্শনী হয়েছে। সেই সব প্রদর্শনীর খবর বেরিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় পত্রপত্রিকায়। পুরো পৃষ্ঠা বা আধা পৃষ্ঠাব্যাপী আমার কাজ সম্পর্কে প্রবন্ধ বেরিয়েছে।

আগের দিনে তো আর সংবাদমাধ্যম বলে কিছু ছিল না। রাজরাজড়াদের যুগে শিল্পীরা ছিলেন রাজদরবারের। তারা আঁকতেন রাজা-রানি বা তাদের পরিবারের ছবি। যেমন এল গ্রেকো, গয়া, ভেলাস্কেসের ছবিগুলো দেখলেই আমরা বুঝতে পারব। এরা তো প্রতিকৃতি-শিল্পী ছিলেন। সেই কালে সংবাদমাধ্যম ছিল না, এবং দরবারের শিল্পী হওয়ার কারণে সংবাদমাধ্যম তাদের দরকারও ছিল না। চিত্রকলা যে সময় সামাজিক বিষয়কে অবলম্বন করতে শুরু করে, প্রায় কাছাকাছি সময়ে সংবাদমাধ্যমেরও আবির্ভাব ঘটে। আর এখন তো প্রকাশের অনেক মাধ্যম—পত্রপত্রিকা, ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম।

আমাদের দেশে আগে তো চিত্র সমালোচক ছিল না। যদিও চিত্রকলার সমালোচনায় আমি বিশ্বাস করি না। চিত্রকলার সমালোচনা হয় না; কারণ, চিত্রকলা আসলে উপলব্ধি ও উপভোগের বিষয়। শিল্পবোদ্ধা হয়তো আছেন। কিন্তু আমি মনে করি, শিল্প বোঝার জিনিস নয়, এটা উপলব্ধির জিনিস। তবে শিল্পের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সংযোগটা কেবল শিল্পের উপলব্ধির জায়গা থেকেই ঘটে, তা কিন্তু নয়। গ্যালারি চিত্রকর্ম বিক্রি করে, ফলে গ্যালারির দরকার হয় সংবাদমাধ্যমের; যাতে করে তাকে প্রমোট করা যায়। তবে এই প্রমোশনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শিল্প সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয়, মানুষের মধ্যে শিল্পরুচি তৈরি হয়। মানুষের মনোজগতে এর প্রভাব পড়তে থাকে ধীরে ধীরে। সংবাদমাধ্যম এই দিক থেকে মানুষের শিল্পরুচি পরিবর্তন বা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আমাদের দেশে এখনো খুব অল্পসংখ্যক মানুষ গ্যালারিগুলোতে যায়। জনসংখ্যার হিসাবে সংখ্যাটা কিন্তু খুবই অল্প। এমনকি, যত মানুষ সিনেমা বা নাটক, বিভিন্ন বাণিজ্যিক মেলায় যায়, তার অতি অল্পসংখ্যকই চিত্র প্রদর্শনীতে যায়। যদিও চিত্রশিল্পী সব সময় অল্পসংখ্যক মানুষের আগ্রহের বিষয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমগুলোর আবির্ভাবের পর সেই সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। আমাদের দেশেও সেটা একটু একটু করে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তবে অনেক সময় দেখা যায়, খুব বিখ্যাত বা প্রবীণ শিল্পীর প্রদর্শনী না হলে গ্যালারিতে সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমকর্মীদের খুব একটা দেখা যায় না।

কয়েক দিন আগে আমি এক তরুণ শিল্পীর প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম। সে খুব ভালো আঁকে। কিন্তু সেখানে একজনও সাংবাদিক বা টেলিভিশনের কাউকে দেখলাম না। তারা শুধুই নামকরা শিল্পীর প্রদর্শনীর প্রতিবেদন করলে, এই নতুন শিল্পী নামকরা হবে কখন? সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ না পেলে সে তো অচেনাই থেকে যাবে, তাই না? মানুষকে অন্তত জানতে দেওয়া উচিত, সে কেমন শিল্পী বা কী ধরনের ছবি আঁকছে। শিল্পীর সঙ্গে সাধারণ দর্শকের সংযোগের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করে, তাহলে শিল্পী অনেক বেশি উৎসাহিত হবে তার শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে। কোনো শিল্পীর কাজ যদি শিল্প সমালোচকের পছন্দ না হয়, সেটাও সে খোলামেলা বলতে পারে। কিন্তু উপেক্ষা করলে শিল্পীকে কেবল অন্ধকারেই রাখা হয় না, তাকে মৃতদেহের মতই রাখা হয়। কিন্তু মানুষের কাছে শিল্পীর যেমন দায় আছে, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের দায় আছে মানুষের প্রতি।

দেশ ও মানুষের প্রতি শিল্পীর দায়ের সূত্রেই আমি স্মরণ করিয়ে দেব যে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ হল, তখন এ দেশের শিল্পীরা কিন্তু নির্বিকার ছিলেন না। আমি তখন স্পেনে, অত দূরে থাকলেও বাংলাদেশের এই স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে এচিং করেছি। জাতির যেকোনো বড় ঘটনায়ই শিল্পী সাড়া না দিয়ে পারে না। এই জুলাই আন্দোলন হল, এখানেও কিন্তু দেখা যাবে চিত্রকর্মের একটা বড় ভূমিকা আছে। দেয়ালগুলো ছেয়ে গেছে নানান রকম চিত্রকর্মে। মাধ্যম হয়তো ভিন্ন, কিন্তু গণমুখী শিল্পীদের প্রকাশের এক মাধ্যম এটি। মানুষ এগুলোর দ্বারা খুব উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। যদিও বছরখানেকের মধ্যে মানুষের স্মৃতি থেকে এসব মুছে গেছে। এই ধরনের শিল্পকর্ম তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটায়। এর কাজ ওই প্রয়োজন মেটানো পর্যন্তই, তারপর সে মরে যায়।

এই ধরনের শিল্পের প্রয়োজন হয় না সংবাদমাধ্যমের; কারণ, সে জনপরিসরে প্রকাশিত ও প্রদর্শিত। কিন্তু স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী শিল্পের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের দায়কে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক চরিত্র আজ এক বহুল আলোচিত বিষয়। এটি যখন ব্যবসায়ী বা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী লোকের মালিকানাধীন হয়, তখন সংবাদ পরিবেশন থেকে সর্বত্রই নিরপেক্ষতার অভাব তাতে থাকবেই। আমি যখন বাংলাদেশের কোনো ঘটনা, বিশেষ করে রাজনৈতিক বা লুটপাটের ঘটনা পড়ি, তখন আমাকে বিবিসি, সিএনএন বা আল জাজিরা দেখে সেগুলোর ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিতে হয়। একটা দেশে যখন নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে, তখন তা সবক্ষেত্রে ঘটে। তবে সব সংবাদমাধ্যমই সেই অবক্ষয়ের শিকার, তা আমি বলব না। কেউ কেউ এই অবক্ষয় থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলাদেশের প্রধানতম নিউজ পোর্টাল। তাদের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঊনবিংশতম বর্ষপূর্তিতে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই নিউজ পোর্টালের কর্মীদের কেউ কেউ আমার খুবই ঘনিষ্ঠ। এখানে আমার বহু সাক্ষাৎকার এবং আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এটিকে আমার পরিবারের মতই মনে হয়। এই পরিবারে রাজু আলাউদ্দিন আছে, যাকে আমি তিরিশ বছর ধরে চিনি, শুধু চিনি বলব না, তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব।

এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই পোর্টালের পাঠকসংখ্যা অগণিত। আমি চিন্তাও করতে পারি না, দেশে-বিদেশে কী বিপুল এর পাঠকসংখ্যা! বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরাট প্রভাব আছে পাঠকদের মধ্যে। আমি জানি, এই বিপুল পাঠককে সংযুক্ত করার জন্য সম্পাদক ও তার সহকর্মীদের অনেক সময়, শ্রম আর কর্মদক্ষতার দরকার হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বর্ষপূর্তিতে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট