1. news@sangbadeisomoy.com : সংবাদ এই সময় : সংবাদ এই সময়
  2. info@www.sangbadeisomoy.com : সংবাদ এই সময় :
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গণতন্ত্র, সুশাসন ও জবাবদিহিতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়: মাসুদ সাঈদী সামাজিক সম্পর্ক সুস্থতা বাড়ায়, অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ : সালাহউদ্দিন আহমদ ঘুরে আসতে পারেন সবুজ পাহাড়ের কোলে নীল পানিরাশির কাপ্তাই লেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যানের দেশে ফিরতে চান শেখ হাসিনা, তবে দিয়েছেন শর্ত আজও ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে এক পরিবর্তন ঐক্যের মূল ভিত্তি ঈমান ভিয়েতনামে ২৪ ঘণ্টায় ১,০৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড

অর্থ-প্রশাসন ও ব্যাংকিংয়ে কোরআনের ‘হিজর’ আইনের প্রয়োগ

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক

ইসলামী অর্থনীতি ন্যায়, দায়িত্ব ও সামাজিক ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত এক নৈতিক অর্থব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগত হলেও এর ব্যবহার সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতা রক্ষার জন্য শরিয়তে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান রয়েছে, যার অন্যতম হলো ‘হিজর আইন’।

হিজর : পরিচিতি ও পরিভাষা বিশ্লেষণ

‘হিজর’ শব্দের অর্থ বাধা দেওয়া বা রোধ করা।

শরিয়তের পরিভাষায়, ‘অর্থনৈতিকভাবে অযোগ্য বা অপব্যয়ী ব্যক্তিকে তার সম্পদ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা।’
ফলে নির্বোধ বলতে শুধু অবুঝ বা নাবালক নয়, বরং যারা অর্থনৈতিকভাবে অপচয়ী, অনৈতিক কাজে সম্পদ ব্যবহার করে সমাজে ক্ষতি সাধন করে, তাদেরও শরিয়াহ নির্বোধ হিসেবে গণ্য করেছে।

কোরআনের হিজর আইনের ভিত্তি

হিজর আইনের মূল উৎস কোরআনের নির্দেশ—‘তোমরা নির্বোধদের (সুফাহা) তোমাদের সম্পদ দিয়ো না, যা আল্লাহ তোমাদের জীবিকার উপকরণ করেছেন।’ (আল-কোরআন, ৪:৫)

ইবনু কাসির বলেন, ‘আয়াতটি নাজিল হয় সেই অভিভাবকদের সম্পর্কে, যারা অনাথদের সম্পদ অপচয় করছিল বা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করত।

আল্লাহ তাদের সতর্ক করে বলেন, সম্পদ সমাজের জন্য জীবিকার মাধ্যম; তাই নির্বোধদের হাতে তা তুলে দিয়ো না।’ (ইবনু কাসির : ১/৪৬৯)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘এখানে ‘আস সুফাহা’ বলতে নাবালক, মূর্খ বা অপব্যয়ী ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে। আয়াতটির উদ্দেশ্য হলো, সমাজে সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অনুপযুক্ত ব্যক্তির হাতে অর্থের অপচয় রোধ করা।’

(আল-জামি লি আহকামিল কোরআন : ৫/২২)

ইমাম তাবারি (রহ.) উল্লেখ করেন, ‘এই আয়াত মূলত অনাথদের অভিভাবকদের উদ্দেশে নাজিল হয়েছিল।

তবে এর অর্থ সাধারণ অর্থাৎ যে কেউ নির্বোধ বা অপব্যয়ী তার কাছেও সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া উচিত নয়।’ (তাবারি : ৪/২৭৫)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে সম্পদ সমাজের জীবিকা নির্বাহের উপকরণ। তাই যারা সম্পদ অপচয় করে বা অন্যায় কাজে ব্যবহার করে, তাদের ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ বৈধ ও প্রয়োজনীয়।

ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিক পটভূমি

ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম মৌলিক লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন। ইতিহাসে দেখা যায়, ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে হিজর আইনের ব্যবহার ছিল প্রশাসনিক ও নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার কার্যকর মাধ্যম।

ফিকহবিদরা যেমন—ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ি, ও ইবনু কুদামা উল্লেখ করেছেন যে রাষ্ট্র বা কাজি এমন ব্যক্তির ওপর হিজর আরোপ করতে পারে, যে নিজের বা সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইবনু কুদামা বলেন, ‘নির্বোধ ও অপব্যয়ী ব্যক্তির ওপর হিজর আরোপ করা হবে, যদিও তারা প্রাপ্তবয়স্ক ও অন্য বিষয়ে বুদ্ধিমান হয়। কারণ সম্পদ অপচয় করা হলো ধন-সম্পদ নষ্ট করা, আর নষ্ট হওয়া রোধ করা ওয়াজিব।’
(আল-মুগনি : ৬/৬০২)

অর্থ-প্রশাসনে প্রয়োগ

আধুনিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষত ব্যবসা ও শিল্প খাতে হিজর আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হতে পারে। যদি কোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি রাষ্ট্রীয় আইন বা শরিয়াহনীতি লঙ্ঘন করে, সম্পদ অপব্যবহার করে বা জনগণের ক্ষতি সাধন করে, তাহলে আদালতের আদেশক্রমে সরকার তার প্রতিষ্ঠান বা সম্পদ সাময়িকভাবে তত্ত্বাবধানে নিতে পারে। এ সময়কে ‘হিজরকাল’ বলা হয়। এ সময়ে—

ক. সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে;

খ. প্রাপ্ত আয় থেকে ব্যয় বাদে বাকি অংশ মালিকের নামে সংরক্ষিত থাকবে;

গ. মালিক নিজে অর্থ উত্তোলন বা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না;

ঘ. তবে সরকার মালিককে ন্যায্য খোরপোশ প্রদান করতে বাধ্য থাকবে;

ঙ. সরকারের মূল উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। তাই সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যার ফলে প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হয়ে যায়।

ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ

ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিজর আইনের নীতিমালা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) ও নৈতিক অর্থায়ন (Ethical Financing) কাঠামোর মধ্যে প্রয়োগযোগ্য।

যদি কোনো বিনিয়োগ গ্রাহক ক্রমাগত অনৈতিক আচরণ প্রদর্শন করে কিংবা ইনভেস্টমেন্ট চুক্তি লঙ্ঘন করে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক শরিয়ার হিজর নীতির আলোকে গ্রাহকের ওপর হাক্কুত তাসাররুফে (ব্যবহার বা হস্তান্তর ক্ষমতা) সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে। উক্ত রূপ ধারা বিনিয়োগ চুক্তিতে সিকিউরিটি ক্লজ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

সর্বোপরি হিজর আইন ইসলামী অর্থনীতির এক অনন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই আর্থিক অনাচার ও অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা দেয়।

লেখক : অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট