1. news@sangbadeisomoy.com : সংবাদ এই সময় : সংবাদ এই সময়
  2. info@www.sangbadeisomoy.com : সংবাদ এইসময় :
বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের লাভক্ষতি মূল্যায়ন - সংবাদ এইসময়
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ ও প্রতিকার বিচার বিভাগ নিয়ে আসিফ নজরুলের কণ্ঠে ফ্যাসিস্টের সুর: কায়সার কামাল গণতন্ত্র, সুশাসন ও জবাবদিহিতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়: মাসুদ সাঈদী সামাজিক সম্পর্ক সুস্থতা বাড়ায়, অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি হতাশ : সালাহউদ্দিন আহমদ ঘুরে আসতে পারেন সবুজ পাহাড়ের কোলে নীল পানিরাশির কাপ্তাই লেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যানের দেশে ফিরতে চান শেখ হাসিনা, তবে দিয়েছেন শর্ত আজও ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে এক পরিবর্তন

বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের লাভক্ষতি মূল্যায়ন

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

মিজানুর রহমান (বাবুল) সম্পাদক সংবাদ এই সময়।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়া নিয়ে দেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে সরকারের এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে দেশের ব্যাপকসংখ্যক মানুষ অসন্তুষ্ট।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়া নিয়ে দেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে সরকারের এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে দেশের ব্যাপকসংখ্যক মানুষ অসন্তুষ্ট। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন—এরূপ ব্যক্তিরা ছাড়া বাকি প্রায় সবাই বন্দর বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিপক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে এক্ষেত্রে প্রকৃত অবস্থাটি কী, অর্থাৎ বন্দর বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে কতটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কিংবা তা ছেড়ে দিলে কার কতটা লাভ বা ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নিরপেক্ষ পর্যালোচনা হওয়া উচিত ও জরুরি।

আলোচনার শুরুতেই একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে, জনপ্রিয় আলোচনা অনুযায়ী মনে হতে পারে যে সরকার বোধকরি শুধু চট্টগ্রাম বন্দরই বিদেশীদের কাছে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি অন্যান্য সমুদ্রবন্দর, এমনকি অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরও একইভাবে বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যতটুকু জানা যায়, সরকার এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সর্ববৃহৎ তিনটি টার্মিনাল (নিউমুরিং, লালদিয়া ও বে) এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নদীবন্দরের ব্যবস্থাপনা আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের উল্লিখিত তিনটি টার্মিনালের দায়িত্ব পাচ্ছে যথাক্রমে ডিপি ওয়ার্ল্ড (সংযুক্ত আরব আমিরাত), এপিএম টার্মিনালস (নেদারল্যান্ডস) ও পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর)। ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিংয়ের পুরো দায়িত্ব এবং বে টার্মিনালের দুটি জেটির একটির দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে বলে জানা যায়। বস্তুত এ টার্মিনালগুলোই চট্টগ্রাম বন্দরের মূল টার্মিনাল এবং এগুলোর মাধ্যমেই বন্দরটির সিংহভাগ পণ্য বা কনটেইনার জাহাজ থেকে ওঠানামা করে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কেন এগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চায়? এ ব্যাপারে নৌ-পরিবহন সচিবের ভাষ্য, ‘এসব টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়িয়ে লিড টাইম কমিয়ে আনতে বিদেশী অপারেটর ছাড়া উপায় নেই’ (প্রথম আলো, ১৩ অক্টোবর ২০২৫)। নৌ-পরিবহন সচিবের এ বক্তব্যের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকি এবং সমস্যার সমাধান হিসেবে অতিসরলীকৃত বক্তব্য প্রদান ও এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের যে টার্মিনালগুলো বিদেশীদের কাছে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সরকার নিজেই বিশাল অর্থ ব্যয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক জেটি, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় ও সংস্থাপন করেছে এবং তা করার সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে (সিপিএ) এরূপ প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে যে টার্মিনালগুলো যদি বিদেশীদের কাছেই ছেড়ে দেয়া হবে তাহলে সরকার কেন এত বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এসব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করছে—এগুলো তো দায়িত্ব গ্রহণকারী বিদেশী কোম্পানিরই করার কথা? পত্রপত্রিকাতেও এ আলোচনা উঠে এসেছে যে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধাদানের জন্যই টার্মিনাল হস্তান্তরের আগ মুহূর্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করা হয়েছে।

মোট কথা, টার্মিনালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এগুলোকে বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন—নৌ-পরিবহন সচিবের এ দাবি একেবারেই তথ্যভিত্তিক নয়। অন্যদিকে টার্মিনালগুলো বিদেশীদের কাছে হস্তান্তর করলেই লিড টাইম কমে আসবে বা স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা লিড টাইম কমিয়ে আনার সামর্থ্য রাখেন না—সচিব মহোদয়ের এ বক্তব্যও অগ্রহণযোগ্য। পতেঙ্গা টার্মিনাল ১৫ মাস ধরে বিদেশীরাই (সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে) চালাচ্ছে এবং এটি ২২ বছরের জন্য তাদের কাছে হস্তান্তরের আগে সিপিএ এখানে মোটামুটি বড় পরিসরের অবকাঠামোও প্রস্তুত করে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরও ফলাফল হচ্ছে, রেড সি গেটওয়ে কর্তৃক দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ১০ মাসে তারা সেখানে কনটেইনার হ্যান্ডল করতে পেরেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ (সমকাল, ১১ মে ২০২৫)। অর্থাৎ লিড টাইম সেখানে মোটেও কমেনি। আর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় তো বাড়েইনি। কারণ হ্যান্ডলিং না বাড়লে আয় বাড়বে কোত্থেকে? তদুপরি চুক্তি অনুযায়ী সেখানে তাদের ২৪ কোটি ডলার (২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা) বিনিয়োগের যে শর্ত ছিল, সেটিও তারা ওই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত পূরণ করেনি। তাছাড়া তাদের গ্রাহকসেবার মান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, যা নিয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা শিরোনাম করেছে ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল: রাজকীয় বিদেশী অপারেটরের কাজে গরিবি হাল’ (আজকের পত্রিকা, ৩১ অক্টোবর ২০২৪)।

অতএব, তথ্য ও আনুষঙ্গিক ঘটনার ভিত্তিতেই প্রতীয়মান হচ্ছে যে বন্দর বা টার্মিনাল বিদেশীদের কাছে হস্তান্তর করলেই তা থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না, সক্ষমতাও বাড়ে না এবং লিড টাইমও কমে না। আর এখন না হোক, ভবিষ্যতে হলেও যে এ থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনাও এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে কোন যুক্তিতে তাড়াহুড়া করে চট্টগ্রাম বন্দরের তিন টার্মিনাল চার বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের জন্য এত তোড়জোড়? তোড়জোড়ের গতি এতটাই প্রবল যে এ হস্তান্তরবিরোধী প্রতিবাদ ঠেকাতে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় ১১ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসের জন্য সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও পথসভা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে খুব স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে বিদেশীদের কাছে টার্মিনাল হস্তান্তরের পেছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে। নইলে এভাবে সভা-সমাবেশ, মিছিল, পথসভা, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজনের মাধ্যমে এ সময়ের মধ্যেই এ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে কেন? তারা এমনটিও ভাবছেন যে তাহলে কি এক্ষেত্রে এমন কোনো গোপন বোঝাপড়া আছে যা তারা জনগণকে জানতে দিতে চান না? এ মুহূর্তে এর চেয়ে জরুরি কোনো কাজ কি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নেই, যা সম্পাদনের মাধ্যমে দেশে বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিকে তারা কিছুটা হলেও স্থিরতা দিতে পারে কিংবা মানুষের নানা দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘবে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে?

অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং বন্দরসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, প্রকৌশলী ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজন মিলে বন্দরকে দক্ষতা ও গতিশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারছেন বা তাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়—রাষ্ট্রের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের এ ধারণাও একেবারেই অমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে নীতিনির্ধারকদের শিথিল দৃষ্টিভঙ্গি ও নানা পর্যায়ের চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীর (প্রেসার গ্রুপ) অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণেই উল্লিখিত বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সামর্থ্যকে যথাযথভাবে ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ব্যবহার করে উঠতে পারছেন না। অথচ সুযোগ পেলে তারা যে সেটি করে দেখাতে পারবেন তার ইঙ্গিত রয়েছে এ তথ্যে—দেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেও চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড (সিডিডিএল) কর্তৃক পরিচালনাধীন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ অধিক কনটেইনার হ্যান্ডল করতে পেরেছে (বণিক বার্তা, ৭ অক্টোবর ২০২৫)। উল্লেখ্য, সিডিডিএল গত ৭ জুলাই থেকে এনসিটির কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করছে এবং তারা এ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক্ষেত্রে ধারাবাহিক অগ্রগতি অর্জিত হয়ে আসছে। ধারণা করা যায়, তারা এ দায়িত্বে থাকলে সামনের দিনগুলোয় এ অগ্রগতি আরো অধিক লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সেটি প্রমাণ করার আগেই তো এই টার্মিনাল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা কারণে সমালোচিত ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে চলে যাচ্ছে।

এদিকে উল্লিখিত টার্মিনালগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আগেভাগেই বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়ার জন্য অতিসম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাশুল প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংস্থা আইএফসি কর্তৃক ২০২৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া—এ সাত দেশের ১৪টি বন্দরের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে প্রথম আলো (১২ অক্টোবর ২০২৫) দেখিয়েছে যে হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির ফলে ওই ১৪টি বন্দরের মধ্যে একমাত্র শ্রীলংকার সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল (এসএজিটি) ছাড়া বাকি ১৩টির চেয়েই চট্টগ্রাম বন্দর অধিকতর ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশকে যেখানে প্রায় নিয়তই উল্লিখিত দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক রফতানি বাজারে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে, সেখানে এ মাশুল বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের চেহারাটি কী দাঁড়াবে? উল্লেখ্য, ওই বর্ধিত মাশুলের সিংহভাগই কিন্তু চলে যাবে নতুন বিদেশী অপারেটর কোম্পানিগুলোর পকেটে। অন্যদিকে আমদানি-রফতানিকারকরা যে বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন, সেটিও তারা আদায় করে নেবেন ভোক্তার কাছ থেকে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত এ মাশুল গিয়ে চাপবে অসহায় সাধারণ জনগণের ঘাড়ে। কী আশ্চর্য অবিমৃষ্যকারিতা! নিজেদের ক্ষমতাকে নিরাপদ ও নিরঙ্কুশ রাখতে গিয়ে আইএফসি তথা বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে দেশের কোটি কোটি দরিদ্র সাধারণ মানুষকে পথে বসিয়ে ও এর বিপরীতে মুনাফার কাঁচা অর্থ নয়া ঔপনিবেশিক পুঁজির কর্ণধারদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না তারা চালিয়ে যাচ্ছে!

অথচ ন্যূনতম দেশাত্মবোধ থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী পুঁজিবাদীদের হাতে তুলে না দিয়ে খুব সহজেই বাংলাদেশের নিজস্ব দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া যেত। কিন্তু স্বল্প সময়ের সামান্য ক্ষমতা ও গোষ্ঠীগত সুবিধার লোভে নয়া সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির এ দেশীয় প্রতিনিধিরা তা হতে দেবেন কেন? বাংলাদেশের মতো পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগকে তাদের আন্তর্জাতিক অভিভাবকরা কখনই পছন্দ করেন না। কারণ এসব দেশ নিজেদের সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে গেলে একদিকে তাদের অভিভাবকরা যেমন নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার হারাবেন, অন্যদিকে তেমনি নয়া ঔপনিবেশিক দেশগুলোর সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল কুক্ষিগত করার সুবিধাও তাদের জন্য সীমিত হয়ে আসবে। অতএব, তারা তাদের নিজস্ব পুঁজি ও নয়া সাম্রাজ্য বিস্তারের সুবিধার্থে এ দেশীয় প্রতিনিধি ও সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর নানা খাতকে যে ধারাবাহিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আপৎকালের নিরুপায় ব্যবস্থা হিসেবে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণকল্পে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেটুকু নির্বাহী দায়িত্ব পালনের সুযোগ ও অধিকার দিয়েছে, তার অধীনে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশীদের হাতে ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য তুলে দেয়া কি সমীচীন হচ্ছে?

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট