সংবাদ এই সময় ডেস্ক।
ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ডুবে গেছে সবজিখেত। গতকাল নওগাঁর মান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা ভারী বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়ায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে একরের পর একর জমির ফসল। ভেসে গেছে বিভিন্ন বিল-পুকুরের মাছ। বাতাসে নুয়ে পড়েছে ধানগাছ। এমন পরিস্থিতিতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকেরা।
খেতে জমে আছে পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে মাঠের ফসল। বিশেষ করে শত শত বিঘা জমির ধানের গাছ পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বিল-পুকুরের মাছও। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় বৃষ্টির কারণে শত শত বিঘা জমির রোপা আমন ধান শুয়ে গেছে। এসব ধানগাছের বেশির ভাগেই রয়েছে আধপাকা শিষ। অনেক জমিতে পানিও জমে আছে। খাল-বিলও পানিতে ভরে গেছে। এসব খাল-বিল দিয়ে পানির তীব্র স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ।
পাঁচন্দর এলাকার কৃষক বদিউজ্জামান বদি বলেন, ‘অনেকেই আগাম আলু চাষ শুরু করেছিলেন। বীজ আলু থেকে এখনো গাছ বের হয়নি। বৃষ্টির কারণে আলুর খেত ডুবে গেছে।’
ডুবে মরল খামারের মুরগি
দুর্গাপুর প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় অসময়ের রাতভর বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় রোপা আমন ধান, পানবরজ, পেঁয়াজ খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খামারে বৃষ্টির পানি জমে ডুবে মারা গেছে দেড় হাজার পোলট্রি মুরগি। খামারি রাব্বি হাসান বলেন, ‘কোনো দিন এই খামারে পানি ওঠে না। আমরাও বুঝতে পারিনি। প্রায় ১৫০০ মুরগি ছিল। সকালে উঠে দেখি সব মুরগি মরে ভেসে আছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
রেললাইনে হাঁটুপানি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে রেললাইনে পানি জমে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন। শনিবার সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পানি জমে থাকায় ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্টেশনমাস্টার শহিদুল আলম বলেন, ভারী বৃষ্টিতে রেললাইনে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এ কারণে ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে।
শুধু রেললাইন নয়; রাতভর ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে শহরেও। অনেক বাসাবাড়ি, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শহরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।
রাতভর ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর। পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গতকাল শহরের স্বরূপনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেসে গেছে পুকুরের মাছ
নিয়ামতপুর, রানীনগর ও মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতে ধান ও সবজির খেত ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এতে কৃষক ও মাছচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নিয়ামতপুরে গত শুক্রবার রাতভর ভারী বৃষ্টিতে মাঠের প্রায় ২৫ শতাংশ ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে এবং প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান ডুবে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটার কথা ছিল। হঠাৎ ভারী বৃষ্টির কারণে ফসলের খেত তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। উপজেলার ভাবিচা গ্রামের ধনঞ্জয় মহন্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১২ বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
এ ছাড়া তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অসময়ে ঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে পাকা রোপা আমন, বোনা সরিষা ও মৌসুমি শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে আমন ধান ও শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। মাঠের আধপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলু খেতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, টানা তিন দিনের বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় মাটিতে নুয়ে পড়েছে রোপা আমন ধান। আধা পাকা এসব ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া আগাম আলু এবং রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কদিন বাদেই যে ফসল ঘরে উঠত, তা নিয়ে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮৮ হেক্টর জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আগাম রোপণ করা ৫ হেক্টর আলু এবং ৬ হেক্টর শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ জানান, কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেসব ধান শুয়ে পড়েছে সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি কম হবে।