লাইফস্টাইল ডেস্ক
সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেম! শুনেই অনেকেই ভয়ে পিছিয়ে যায়।
এমন পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে অবশ্য কারণও আছে। সাংবাদিকরা সাধারণত পরিশ্রম অনুযায়ী উপার্জন করতে পারেন না। তাদের অনিয়মিত জীবন, ব্যক্তিগত জীবনের সময় স্বল্পতা, কাজের প্রতি ভালোবাসা এই পেশাটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। তাছাড়া সবার ছুটি থাকলেও সাংবাদিকদের ছুটি নেই বললেই চলে। ফলে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোও কঠিন হয়ে যায়।
তবে সত্যি কথা হলো, এই সম্পর্ক শুধুই কঠিন নয়; বরং এটি হতে পারে আপনার জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও সমৃদ্ধির উৎস।
সাংবাদিকরা শুধু খবর তুলে আনেন না, তারা জীবন ও সমাজকে নতুন চোখে দেখেন। আর সেই দৃষ্টিভঙ্গি আপনার প্রেমের সম্পর্ককেও করে তুলতে পারে আরও রঙিন, আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয়।
সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের ইতিবাচক ১০টি দিক:
১. শহরের সেরা জায়গাগুলো জানা
অনেকেই ভাবেন সাংবাদিকরা নিস্তেজ। কাজের মধ্যেই তাদের দিন পার হয়। কিন্তু বিষয়টি হলো তারা শহরের সব সেরা স্থান, রেস্তোরাঁ, সিনেমা প্রিমিয়ার এবং পার্টি সম্পর্কে জানে। ফলে সম্পর্কের সময় আপনার সামাজিক জীবনও সমৃদ্ধ হয়। নতুন জায়গা আবিষ্কার করা এবং সেরা অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
২. সৃজনশীলতা
একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি সৃজনশীল। ফলে যেকোনো গল্প এবং তথ্যকে তারা আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে জানেন। তাদের এই গুণ তারা শুধু নিউজরুমেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লাগাতে পটু। ফলে এই সৃজনশীলতা প্রেমের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
৩. অর্থ তাদের কাছে মুখ্য নয়
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ্য হলো, তাদের কাজের মূল চালিকা হিসেবে অর্থ কাজ করে না। যদি এক্ষেত্রে অর্থ কাজ করতো তাহলে হয়তো অনেকেই এই পেশায় থাকতো না। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেই।
এটি প্রেমের জীবনে এক বিশেষ সুবিধা এনে দেয়। একজন সাংবাদিক সম্পর্ককে অর্থের মাপকাঠিতে মাপেন না। তারা সময়, ভালোবাসা, যত্ন এবং মনোযোগকে মূল মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে। অর্থাৎ, তারা আপনার সঙ্গে সময় কাটাতে কিংবা কমিটমেন্টের সাথে কখনোই আপোষ করবে না।
৪. জ্ঞান ও তথ্যের ভান্ডার:
সাংবাদিকরা সব সময় খবরের ভেতরে ডুবে থাকে। তাদের জানার পরিধি কোনো নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি কিংবা সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবন সব কিছু নিয়েই তারা আগ্রহী। ফলে, তাদের সঙ্গে কথোপকথন মানেই প্রতিবার কিছু না কিছু নতুন শেখা।
তারা বিভিন্ন মানুষের জীবনের গল্প শুনে, কষ্ট দেখে, সংগ্রাম জানে। সেই গল্পগুলো তারা ভাগ করে নিতে ভালোবাসে, আর আপনিও সেই গল্পের অংশ হয়ে যান।
৫. বিশ্বস্ততা
সাংবাদিকদের সবচেয়ে প্রশংসনীয় গুণগুলোর একটি হলো তাদের বিশ্বস্ততা ও গোপনীয়তা রক্ষা করার ক্ষমতা। পেশাগত জীবনে যেমন তারা সূত্রের তথ্য গোপন রাখতে জানে, ঠিক তেমনই ব্যক্তিগত জীবনেও তারা বিশ্বাস ও আস্থাকে প্রাধ্যন্য দেন।
৬. মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শী
সাংবাদিকদের জীবন মানেই ব্যস্ততা। খবরের পেছনে দৌড়ানো, সাক্ষাৎকার নেওয়া, লেখালেখি, সম্পাদনা, রিপোর্ট পাঠানো, সব মিলিয়ে তাদের প্রতিনিয়তই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ব্যস্ততার মাঝেও তারা সময়কে ভাগ করে নেয়। যা সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। আর এই অভ্যাসই তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কেও দারুণভাবে কাজে লাগে।
৭. স্পেস দেওয়া জানা
সংবাদ মাধ্যমের কাজ অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। একদিকে ডেডলাইন, অন্যদিকে তথ্যের ঝড়। এই চাপের মধ্যে কাজ করেই তারা শিখে যায়, কীভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কীভাবে ব্যস্ততার মাঝেও মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। সাংবাদিকদের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। তারা আপনাকে এক মিলিয়ন প্রশ্ন দিয়ে অতিষ্ঠ করবে না বা আপনি কীভাবে আপনার দিনের প্রতিটি মিনিট কাটিয়েছেন তা জানার দাবি করবে না। তারা আপনাকে স্পেস দেবে এবং বিনিময়ে একই আশা করবে।
৮. কঠোর পরিশ্রমী
একজন সাংবাদিকের জন্য দিনের শুরু বা শেষ নির্ষিষ্ট নয়। কখনো তারা রাত জেগে কাজ করে, আবার কখনো ছুটির দিনেও ব্রেকিং নিউজের পেছনে ছোটে। কিন্তু এর মাঝেও তারা হাল ছাড়ে না। তাদের পেশার প্রতি এই অবিচল নিষ্ঠাই তাদের চরিত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য।
এমন মানুষদের জীবনে পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং সময়ের মূল্যবোধ এতটাই গেঁথে যায় যে, তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেটি প্রয়োগ করে। ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই।
৯. না-বলা কথাও সাংবাদিকরা বোঝে:
সাংবাদিকরা জানে, সব কথা মুখে বলা হয় না, অনেক কিছু চোখে, স্বরে বা নীরবতায় প্রকাশ পায়। তাই আপনার মনের অস্থিরতা, কষ্ট বা অনুচ্চারিত দুঃখও তারা টের পাবে। আপনি না বললেও তারা বুঝতে পারবে, কিছু একটা ঠিক নেই।
১০. সহায়ক মনোভাব
সাংবাদিকরা প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের সামর্থ্যের বাইরেও যায়। এক্ষেত্রে অপরিচিত কেউ হলেও কোনো ব্যাপার না। তারা তাদের প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখে না। এটা বলাই যায় যে, সাংবাদিকদের হৃদয় বড় হয়।
সব মিলিয়ে, একজন সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেম মানে এমন একজন মানুষকে পাওয়া, যিনি নিজের স্বপ্নের মতোই আপনাকেও ভালোবাসবেন। তিনি জানেন, কোনো সম্পর্ক সহজ নয়, কিন্তু পরিশ্রম আর আন্তরিকতাই সেটিকে স্থায়ী করে তোলে।