লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী খামারভাতি এলাকায় অবস্থিত প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এক শিব মন্দির পুনর্নির্মাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
তবে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মন্দির পুনর্নির্মাণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিব মন্দিরের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৮ একর ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে বর্তমানে মন্দিরের দখলে রয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ জমি। বাকি পুরো জায়গা দখল করে রেখেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক ও তার সহযোগীরা।স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন তারা অবশিষ্ট ২৭ শতাংশ জায়গাটিও দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৫০ বছর আগে খামারভাতি শিব মন্দিরটি ছিল এলাকার অন্যতম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অন্যত্র চলে যাওয়ায় মন্দিরটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয় এবং পরে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ২০০১ সালের দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে পুনরায় পূজার্চনা শুরু করেন। ২০১২ সালে মন্দিরের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে সিরাজুল হকসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। মামলাটি এখনো চলমান।
প্রবীণ বাসিন্দা জাবেদ উদ্দিন (৬৮) জানান,’ আ.লীগ নেতা সিরাজুল হক ও তার লোকজন জোরপূর্বক মন্দিরের জায়গা দখলে রেখেছেন। মন্দিরটি পুননির্মাণে বারবার বাধা দিয়েছেন তারা। মন্দিরের অনেক ধ্বংস্তুপ পড়ে আছে। এটা খুবই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মন্দির।’
স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফজলুল হক বলেন, “এর আগে বহুবার মন্দির পুনর্নির্মাণে বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার লোকজন। তখন আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। এবার গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থেকে আমরা তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দেব।”
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দয়াল চন্দ্র রায় বলেন, “মন্দিরের জমি উদ্ধারে মামলা করেছি। এখন মন্দিরের আয়ত্বে থাকা ২৭ শতাংশ জায়গাতেও দখলের তৎপরতা চলছে। আমরা টিনশেড ঘরে পূজার্চনা করছি, কিন্তু ইটের মন্দির নির্মাণে বারবার বাধা পেয়েছি। এবারে স্থানীয়রা পাশে থাকায় আমরা নতুন করে আশা দেখছি।”
কমিটির সভাপতি সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, “আমাদের কাছে জমির সমস্ত নথিপত্র রয়েছে। মন্দিরের আয়ত্বে থাকা ২৭ শতাংশ জায়গায় মন্দিরটির পুননির্মাণ করে পূজার্চনা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু জমি দখলকারীদের বাধায় আমারা ভীতস্ত হয়ে পড়েছি। এবার মন্দির পুননির্মাণে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।’
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক দাবি করেন, “৮ একর ৪২ শতাংশ জমির মালিক আমরা। স্থানীয়দের অনুরোধে অস্থায়ী মন্দিরে পূজার অনুমতি দিয়েছি। আদালতের রায় ছাড়া স্থায়ী মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না।”
তিনি দলিলের ভিত্তিতে জমির মালিকানা দাবি করলেও কার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন—সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।