1. news@sangbadeisomoy.com : সংবাদ এই সময় : সংবাদ এই সময়
  2. info@www.sangbadeisomoy.com : সংবাদ এইসময় :
চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সংকট - সংবাদ এইসময়
রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সংকট

  • প্রকাশিত: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

মিজানুর রহমান(বাবুল) সম্পাদক,সংবাদ এই সময়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার করুণ অবস্থা প্রতিদিন গণমাধ্যমে উঠে আসে। সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালে আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি নেই। আবার কোথাও যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই নার্স, চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান। নানা সংকটের ফলে প্রতিনিয়ত রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

আমাদের সময়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়- কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদীর পশ্চিম তীরজুড়ে বিস্তৃত ২৫টি চরের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বন্যা ও নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো এসব মানুষের জীবনযাত্রা নির্ভর করে নদী আর নৌকার ওপর। দুর্যোগকালে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট, সচেতনতার অভাব এবং নৌযানস্বল্পতার কারণে চরবাসীরা প্রায়ই জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। বিশেষ করে চরের কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারী অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয় নৌকা পার হয়ে। যোগাযোগের অভাবে প্রসূতি মা নিরাপদ প্রসবের সুযোগ না পেয়ে অনেক সময় প্রাণ হারান।

টিকা কার্যক্রম বা মাতৃস্বাস্থ্যসেবার আওতায় চরাঞ্চলের খুব অল্পসংখ্যক নারী আসতে পারেন। অপুষ্টি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ বা নিউমোনিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগও সেখানে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে কেবল চিকিৎসার অভাবে। বিশেষ করে বন্যা, নদীভাঙন, মৌসুমি কর্মহীনতা, দারিদ্র্য- এসবের সঙ্গে তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম যেন আরও কঠোর করে তুলেছে স্বাস্থ্যসেবা সংকট। এই চরাঞ্চলগুলোতে ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়াটাই এখন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অনেক চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল নেই বললেই চলে। কোনো কোনো চরে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও তা সচল নয়; ওষুধ, ডাক্তার, নার্স- কিছুই মেলে না। চরবাসী তাই স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কিংবা ভ্রাম্যমাণ ওঝার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়, যা অনেক সময় বিপর্যয় ডেকে আনে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার।

এই চিত্র কেবল মানবিক সংকট নয়, এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। সংবিধান নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তিস্তার চরের মানুষ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে- ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এই সেবাগুলো চরাঞ্চলে পৌঁছায়নি। দেশের প্রান্তিক জনপদগুলোয় ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও জোটে না সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া চরাঞ্চলের মানুুষের সংকটের মূলে রয়েছে দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা। চরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এখানে প্রয়োজন নিরাপদ ও টেকসই যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা। সরকারি নৌ অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় তারা নৌকাওয়ালাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে চরের বাসিন্দারা। কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও চরাঞ্চলে কাজ শুরু করলেও, তা পর্যাপ্ত নয়। প্রত্যেক বড় চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, পর্যাপ্ত ডাক্তার ও ওষুধ সরবরাহ, নারীদের জন্য স্যানিটারি সামগ্রী এবং জরুরি রোগীর জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্স চালু করতে হবে।

এমতাবস্থায় চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসা জরুরি। চরবাসীর বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুনভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চরাঞ্চলে পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার অভাবে আর যেন কোনো প্রাণ না হারায়, সেটাই সম্মিলিত অঙ্গীকার হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসেবাকে বিলাসিতা বা সুযোগ নয়, মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট